Sunday, August 24, 2025

থানা হাজতে যুবকের মৃত্যূ সিসিটিভি ফুটেজের অবশিষ্টাংশ ও ল্যাপটপ কোথায় জানতে চান -পিতা


 কক্সবাজারের চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি দূর্জয় চৌধুরীর চকরিয়া থানা হাজতে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। 

শুক্রবার (২২ আগস্ট) ভোরে এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু হাজতের সিসিটিভির ফুটেজ রাত ১টা ২২ মিনিটের পর আর নেই। পাওয়া যাচ্ছে না দূর্জয়ের ল্যাপটপটিও। কমল চৌধুরী তার ছেলে দূর্জয়ের ল্যাপটপ এবং সিসিটিভির অবশিষ্টাংশ ফুটেজ কোথায় জানতে চেয়েছেন।

কমল চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলে দূর্জয় চৌধুরীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলে আত্মহত্যা করেনি। আমাকে যদি দা-ছুরি দিয়ে কেটেও ফেলে, তারপরও আমি বিশ্বাস করি না আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি অবশ্যই আছে। পুলিশের গাফিলতি আছে বিধায় আমাদের আইওয়াশ করানোর জন্য তিনজন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যদি এরকম না হতো, তাহলে পুলিশ প্রত্যাহার করল কেন? থানার সিসিটিভি ফুটেজে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটা ২২ মিনিট পর্যন্ত তাকে হাঁটাহাঁটি করতে দেখা গেছে। এরপর আর কোনো ভিডিও নাই কেন?

তিনি বলেন, ‘থানায় ফাঁসিতে ঝুলানোর যে ছবি দেখতে পেয়েছি, দুই ইঞ্চি ফাঁক অবস্থায় লোহার গ্রীলে হাত ধরে কীভাবে আত্মহত্যা করা সম্ভব? তাছাড়াও আমার ছেলের ল্যাপটপ ও ব্যক্তিগত ব্যাগটাও পাচ্ছি না। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় অফিসে চলে যায় আমার ছেলে। পরে ওইদিন চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম আমাকে বেলা ১১টার দিকে কল করে স্কুলে যেতে বলেন। আমি ১০ মিনিটের মধ্যে স্কুলে যায়। ওখানে গিয়ে দেখি, শিক্ষকরা সবাই বসে আছে। সেখানে আমার ছেলে দূর্জয়ও ছিল। এসময় প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম বলেন, আপনার ছেলে টাকা আত্মসাত করেছে। তখন আমি সকল শিক্ষকের সামনে বলি, আমার ছেলে যদি টাকা আত্মসাত করে, আমি সব টাকা পরিশোধ করব, মুচলেকাও দেব। প্রয়োজনে ওর চাকরি চলে যাক, কিন্তু আপনারা অন্যায়ভাবে কিছু করবেন না। তারপরও কেন ওরা সবাই মিলে আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করল? তার বিচার আমি চাই।’

তিনি আরও বলেন, ওই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানমের স্কুলের দুর্নীতির সমস্ত ডকুমেন্ট আমার ছেলের ল্যাপটপে আছে। আমার ছেলে উপজেলার মধ্যে সেরা কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে সেরা সনদ পেয়েছে। আমার ছেলের ল্যাপটপে এমন কিছু তথ্য ছিল, যা ফাঁস করে দেবে ভেবে দূর্জয়কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করানো হয়েছে।

তিনি শীঘ্রই ছেলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যারা যারা জড়িত, সবাইকে আসামি করে আদালতে মামলা করবেন বলেও জানান। তিনি যেকোনোভাবে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান।

এদিকে শুক্রবার সকালে দূর্জয় চৌধুরীর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে বেলা তিনটার দিকে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিন বেলা চারটার দিকে তার লাশ চকরিয়ার সামাজিক শ্মশানে দাফন (শ্মশানস্ত) করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও মানবাধিকার কর্মী উদয় শংকর পাল মিটু বলেন, দূর্জয়ের হত্যার ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষককে দ্রুত আটক করলে প্রকৃত সত্য উদঘাটন হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য প্রশাসনকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চকরিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম ওই স্কুলের অফিস সহকারি দুর্জয় চৌধুরী চেক জালিয়াতি করে এবং নগদে প্রতিষ্ঠানের দুই লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে চকরিয়া থানায় একটি অভিযোগ করেন। কিন্তু চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম ওই অভিযোগের ভিত্তিতে দূর্জয় চৌধুরীকে হাজতে আটকে রাখেন। পরবর্তীতে ভোর চারটার দিকে হাজতে ফাঁসিতে ঝোলানো অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করেন চকরিয়ার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভুমি) রুপায়ন দেব।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, চকরিয়া থানায় অফিস সহকারি দূর্জয় চৌধুরীর আত্মহত্যার অভিযোগে থানার এএসআই হানিফ মিয়া ও দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মুখপাত্র জসিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার ও চকরিয়া কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক।

এদিকে থানা হেফাজতে দূর্জয় চৌধুরীর আত্মহত্যার ঘটনায় শনিবার দুপুরে চকরিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে বদলি করেছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফউদ্দীন শাহীন। তার স্থলে পদায়ন করা হয়েছে তৌহিদুল আনোয়ারকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) অভিজিৎ দাস।

তিনি বলেন, জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা করেছে। ইতোমধ্যে এই কমিটি কাজ শুরু করেছে। খুব দ্রত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।




শেয়ার করুন