Monday, May 5, 2025

গাজীপুরে হামলায় আহত হাসনাত আবদুল্লাহ


 গাজীপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলা হয়েছে। এতে গাড়ির গ্লাস ভেঙে আহত হয়েছেন তিনি। রোববার সন্ধ্যায় চান্দনা চৌরাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে। হামলার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। 

হাসনাতের গাড়িতে হামলার পর এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘হাসনাতের গাড়িতে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী গাজীপুর এলাকায় হামলা করেছে। গাড়ির কাচ ভেঙে গেছে, হাত রক্তাক্ত হয়েছে। আশপাশে যারা আছেন হাসনাতকে প্রটেক্ট করুন।’ গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল হাসান জানান, হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন-গাজীপুর মহানগরের ১৩নং ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মো. নিজাম উদ্দিন এবং কাশিমপুর থানার শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের সভাপতি মাসুম আহমেদ দিপু। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তিনি আরও বলেন, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় একটি অনুষ্ঠান শেষে তিনি ঢাকায় ফিরছিলেন। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় তার গাড়িবহর জ্যামে আটকে থাকাবস্থায় চার-পাঁচটি মোটরসাইকেলে এসে তার গাড়িতে হামলা করা হয়। হামলায় তিনি হাতে আঘাত পেয়েছেন এবং গাড়ির গ্লাস ও উইন্ডশিল্ড ভেঙে যায়। পরে তার কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে তাকে নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এনসিপি গাজীপুরের যুগ্ম আহ্বায়ক আকাশ ঘোষ বলেন, হাসনাত কোথায় গিয়েছিলেন বা কেন আসছিলেন-এরকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। হামলার পর আমাদের কাছে একটা কল এসেছে-তিনি হামলার শিকার হয়েছেন। এর আগে কিছুই জানতাম না। জানার পর আমাদের একটি টিম (ছাত্রদের) ঘটনাস্থলে যায়।
এদিকে হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে গাজীপুরে রাত ৯টায় মশাল মিছিল হয়েছে। রাজধানীর বাংলামোটরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এনসিপির নেতাকর্মীরা। রোববার রাত ১০টার দিকে রূপায়ণ টাওয়ারের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড় ঘুরে আবার রূপায়ণ টাওয়ারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর বলেন, হাসনাত আবদুল্লাহর ওপর এই বর্বর হামলা শুধু একজন নেতার ওপর নয়, এটি দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর আঘাত। যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিক্ষোভ শেষে নেতারা জানান, প্রয়োজনে দেশব্যাপী কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে প্রতিকার না পেলে আরও বড় ধরনের আন্দোলনে যেতে তারা বাধ্য হবেন।

হাসনাতের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, হামলাকারীদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। ঢাবির আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেদোয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এসব লীগ বাংলাদেশে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে পরিগণিত। তারা জুলাইয়ে দুই হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। গত ১৫ বছরে অসংখ্য জুলুম নির্যাতন করেছে। তারা কোনো রাজনৈতিক দল হতে পারে না। তাদের স্থান কেবল ফাঁসির মঞ্চ।

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, হামলার প্রতিবাদে রোববার রাত সাড়ে ৮টায় হাসনাত আবদুল্লাহর নিজ এলাকা দেবিদ্বারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এনসিপি ও বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ।

৯ মাসে অভ্যুত্থানকারীদের ওপর ৩৬ হামলা, নিহত ১ : গেল ৯ মাসে গণ-অভ্যুত্থানে জড়িত ব্যক্তি ও পরিবারের ওপর ৩৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একজন নিহত এবং ৮৯ জন আহত হয়েছেন। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাফ্যাক্ট’ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার খবর বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পেয়েছে। বাংলাফ্যাক্টের সিনিয়র বিশ্লেষক নাজমুন নাকিব পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। হামলার ঘটনার সবচেয়ে বেশি জড়িত থাকার অভিযোগ গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের বিরুদ্ধে। প্রায় ১৩টি ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ রয়েছে। এরপরেই রয়েছেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। তাদের বিরুদ্ধে ৯টি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। নয়টি ঘটনায় হামলাকারীর পরিচয় বা অভিযুক্তের তথ্য নেই। এসব ঘটনায় হামলাকারীদের সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত এবং ছিনতাইকারী হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন