নিজস্ব প্রতিবেদক:: আনোয়ারায় তাফসীরুল কোরআন মাহফিলে গিয়ে আলোচক হিসেবে আলোচনা করায় অন্যায়ভাবে আইরমঙ্গল পেঠান শাহ (রহ:) জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলামকে হেনস্তা করে চাকরিচ্যুতি করার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ( ১০ এপ্রিল) বটতলী ইউনিয়নের আইরমঙ্গল সমাজ কল্যাণ পরিষদ, এলাকাবাসী ও প্রবাসীদের যৌথ উদ্যোগে আইর মঙ্গল সাইক্লোন সেন্টার মাঠে এক তাফসীরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ মাহফিলে এলাকার মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে বিশেষ আলোচক হিসেবে দাওয়াত পান আইরমঙ্গল পেঠান শাহ (রহ:) জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ ফারুক। বৃহস্পতিবার এশারের পরে মাহফিলে গিয়ে আলোচক হিসেবে আলোচনা করার পর থেকে এই ইমামকে মসজিদে আর ডুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এই ইমাম ও খতিবের বাড়ি রায়পুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পড়ুয়া পাড়া এলাকায়।
জানতে চাইলে চাকরিচ্যুত পেঠান শাহ (রহ:) জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে আমি ওই মসজিদে সুন্নি ইমাম ও খতিব হিসেবে যোগদান করেছি। আমাকে বলা হয়েছিলো এটা সুন্নি মসজিদ, এখানে ওয়াহাবি, জামায়াত অনেক মতবাদের মানুষ আছে। সবার সাথে মিলেমিশে থাকবেন। গত ১০ তারিখ এখানে এলাকাবাসী ও সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে একটা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ মাহফিলটা যারা আয়োজন করেছে তাদের অনেকে আমার পিছনে নামাজ পড়ে। এলাকার মসজিদের ইমাম হিসেবে এলাকাবাসী এবং মুসল্লিরা মিলে আমাকে মেহেরবানী করে মাহফিলে দাওয়াত করে। পোষ্টারে আমার নাম দেওয়ার পর সুন্নি পন্থী অনেকে বলতে লাগলো হুজুরকে আমরা সুন্নি হিসেবে রেখেছি। এদের মাহফিলে কেন হুজুরের নাম দিলো। সভাপতি আমার কাছে জানতে চাইলে আমি বলেছি, আমি সুন্নি হতে পারি ঠিক আছে। কিন্তু আপনারা যে বলেছেন এখানে সব মতবাদের মানুষ আছে আপনি সবার সাথে মিলেমিশে থাকবেন। সেজন্য আমি মাহফিলে নামটা দিয়েছি। এটা বলার পর সভাপতি এটা মেনে নিছে, আমাকে আর কিছু বলে নাই। পরে অনেকে এসে আমাকে বলতেছে হুজুর আপনাকে চাকরিচ্যুত করবে। আমি বলেছি, আমাকে বলেছে সবার সাথে মিলেমিশে থাকার জন্য বলেছে, সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে গিয়ে যদি আমার চাকরি চলে যায় সমস্যা নেই, আমি তো একজন ইমাম আমি তো কাউকে করতে পারি না, একজন ইমাম যদি সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে মানুষ যাবে কোথায়। বৃহস্পতিবারে এশারের পর আমি আলোচক হিসেবে ওই মাহফিলে আলোচনা করি। আলোচনা শেষ করে স্টেজ থেকে নামার পর আমাকে একজন বললো হুজুর আপনি এদিকে চলে যান, ছেলে কয়েকজন গেছে আপনাকে পেলে ওরা মারবে। ওরা অনেক উশৃঙ্খল করতেছে। তারপরে আমি বাড়ি চলে যাই। আমাকে মারতে পারেনি।
বাড়িতে আসার পর সভাপতি আমাকে ফোন দিয়ে বলে আপনি এখানে সমস্যা বাঁধায়ছেন। এখানে আর আসিয়েন না, বেতন নিয়ে চলে যাইয়েন। আমি সভাপতিকে বলেছি, এটা তো কোন সমাধান হতে পারে না, আমি কি সমস্যা বাঁধায়ছি আপনাকে জবাব দিতে হবে। জবাব দেওয়ার পরে আমি বেতন নিবো না চলে আসবো। একটা মানুষকে বিদায় করার একটা সিস্টেম তো আছে, আমি কি এমনে ডুকছি এখানে, সিস্টেম করেই তো ডুকছি। আমাকে ১০ জন নিয়েই তো এখানে রাখছেন। হঠাৎ করে এভাবে তো আমাকে বিদায় করতে পারেন না। তারপরেও সভাপতি আমাকে বলতেছে, আপনি এখানে সমস্যা বাঁধায়ছেন, আপনি এখানে আর আসতে পারবেন না। আপনি সময় করে এসে বেতন নিয়ে যাইয়েন। আমি বলেছি আমাকে এভাবে বিদায় দিতে পারেন না। উনারা আমাকে চাপ দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। আমি নিরুপায় হয়ে ভয়ে শুক্রবার মাগরিবের পরে গিয়ে আমার কাপড়চোপড় নিয়ে চলে আসছি। আমাকে একমাসের অগ্রিম বেতন দিছে অথচ এটা নিয়ম না। ৩ মাসের অগ্রিম বেতন দিতে হয় হঠাৎ করে একটা হুজুর বিদায় দিলে। আমি ১০ জন নিয়ে মসজিদে দায়িত্ব নিয়েছিলাম আমাকে সম্মানের সাথে বিদায় দেয় নাই।
তিনি আরও বলেন, আমাকে যেভাবে সম্মানের সাথে ডুকায়ছিলো ঔভাবে বিদায় দেয় নি। আমাকে হেনস্তা করে বিদায় দিয়েছে। কোন একজন আলেম এক মতবাদ থেকে যদি অন্য মতবাদে চলে যায় তাহলে তাকে হেনস্তা, মারধর করা কোন আইনে আছে। ভালো না লাগলে সম্মানের সাথে বিদায় করে দেন। আমি ৩ মাসের অগ্রিম টাকা দাবি করেছি, আমাকে ১ মাসের টাকা দিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পেঠান শাহ (রহ:) জামে মসজিদের সভাপতি জামাল বলেন, এ মসজিদটা, এ এলাকাটা ২০০ বছর আগে থেকে সুন্নি এলাকা। অর্থ্যাৎ জামায়াত, বিএনপি, আওয়ামীলীগ সবাই আছে সর্বদলীয় আছে ঠিক আছে তারপরেও এখানে সুন্নি কার্যকলাপ চলে। এখানে জামায়াতের একটি মাহফিল হয়েছে। এ মাহফিলে হুজুরকে দাওয়াত দিছে বা দেয় নাই, যাবে কি যাবে না এটা আমাকে কিছুই জানাই নায়। ওইদিন আমি বটতলী বাজার থেকে এশার নামাজ পড়ে বাড়িতে আসার পথে দেখতেছি রাস্তায় অনেক লোকজন জড়ো হয়ে আছে, আমাকে একজন এসে হাত ধরে জিজ্ঞেস করতেছে হুজুর মাহফিলে গেছে এটা আপনাকে বলেছে? আমি বলেছিলাম না। তখন তাদের বলেছি হুজুর এ মাহফিলে না গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো। পরিস্থিতি বুঝে আমি হুজুরেকে ফোন দিলাম আপনি কোথায়? হুজুর বললো বাড়িতে। তখন আমি বললাম বাড়িতে চলে গেছেন ভালো করেছেন আপনি এখানে থাকলে আপনিও বেইজ্জত হতেন আমরাও হতাম। আপনি মাহফিলে কেন গেলেন, আপনি এখানে থাকলে বেইজ্জত হতেন, এখানে আসলে বেইজ্জত হবেন, আল্লাহর ওয়াস্তে এখানে আর আসিয়েন না। আপনি ১০ দিনের বেতন পাবেন, আপনাকে ১ মাসের বেতন দিয়ে দিবো। মানুষজন না থাকা অবস্থায় মাগরিবের পরে আমি থাকা অবস্থায় ফোন দিয়ে এসে বেতন নিয়ে চলে যাবেন। শুক্রবার মাগরিবের পরে হুজুর আমাকে ফোন দিয়ে এসে উনার জিনিসপত্রসহ এক মাসের বেতন নিয়ে চলে গেছে।
ওই ইমামকে চাকরিচ্যুতি করার অপরাধটা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই মাহফিলে যাওয়াটা হচ্ছে ইমামের অপরাধ।